তিনটি ছোটো অনুপ্রেরণামূলক এবং উদ্দীপণামূলক ছোটো গল্প,যা জীবনের উন্নতিতে সাহায্য করবে!

0
6018
3 motivational short story in bangla

জীবনের যেকোনো বয়সেই শেখা যায় জীবনের মূল্য সম্বন্ধে। শেখার কোনো নির্দিষ্ট বয়স হয় না তাই সাফল্যও যেকোনো বয়সে আসতে পারে। জীবন হলো মানুষের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষক। আর জীবনের এই শিক্ষাক্ষেত্রে শেখার জন্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর ছোটো গল্প, যেইগুলো আমাদের জীবনে বড়ো অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াতে পারে। জীবন একঘেয়ে হয়ে দাঁড়ালেও এই অনুপ্রেরণামূলক ছোটোগল্পগুলো সাহায্য করতে পারে আবার উদ্দীপনার সাথে জীবন চালানোর ক্ষেত্রে।

এখন পড়ে নেওয়া যাক সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক সেই তিনটি অসাধারণ ছোটো গল্প, যা আপনার দৃষ্টিভঙ্গী পালটে দিতে সক্ষম।

১।বোকা বাঁদর

সময়টা ছিল শীতকালের রাত্রিবেলা। অতিরিক্ত ঠান্ডায় শরীরের হাড় পর্যন্ত জমে যাচ্ছিল। সেইরকম একটি রাত্রে একটি গাছের ডালে একগুচ্ছ বাঁদরের দল গুটিশুটি মেরে বসেছিল। এমন সময় দলের একটি বাঁদর বলে উঠলো, “ইশ! আমরা যদি এখন আগুনের সন্ধান পেতাম তাহলে কী আরামটাই না হতো!”

ঠিক সেই সময়েই তারা একগুচ্ছ জোনাকিকে দেখতে পেলো। একটি শিশু বাঁদর সেই জোনাকিকেই আগুন ভেবে বসলো। সে একটি জোনাকিকে ধরে তাকে শুকনো পাতার মধ্যে রেখে সেটি থেকে আগুন জ্বালাবার জন্য শুকনো পাতাগুলোতে ফু দিতে লাগলো। তার এই কান্ড দেখে অন্যান্য বাঁদর গুলোও আগুনের আশায় ওই জোনাকিওলা শুকনো পাতায় তারাও ফু দিতে লাগলো।

ইতিমধ্যেই একটি ওই গাছে বাস করা একটি চড়ুই পাখি তার বাসায় ফিরে এলো এবং তার নজরে বাঁদরদের এই কান্ডকারখানা পড়লো। চড়ুই পাখিটা হেসে উঠে বাঁদরদের উদ্দেশ্যে বললো, “আরে বোকা, ওটা তো জোনাকি পোকা, আসল আগুন নয়। শীত থেকে যদি বাঁচতে চাও তাহলে একটা গুহায় আশ্রয় নাও তোমরা”। কিন্তু বোকা বাঁদরগুলো চড়ুই পাখির কথাতে কানই দিলো না। তারা ওই বেচারা জোনাকিকেই ফু দিতে লাগলো।

কিছুক্ষন পর বাঁদরগুলো ফু দিতে দিতে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়লো এবং তখন বুঝতে পারলো যেই চড়ুই পাখিটি ঠিক কথাই বলেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পারার পর তারা জোনাকিটাকে ছেড়ে দিলো এবং একটি গুহায় গিয়ে তারা আশ্রয় নিলো।

নীতিকথাঃ

এই গল্পটি থেকে যে বিষয়টি শেখা যায় সেটি হলো ভালো শিক্ষার্থী হতে গেলে একনিষ্ঠতার প্রয়োজন একথা সত্য কিন্তু সেই সঙ্গে অন্যান্য জ্ঞানের জন্যও মনের জানালা খোলা রাখা প্রয়োজনীয়।এই গল্পের বাঁদররা একনিষ্ঠ ভাবে তাদের কাজটি করছিলো কিন্তু চড়ুই পাখির দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞানকে তারা গ্রহণ করতে পারে নি। তাই জীবনে উন্নতি করতে হলে সবদিক থেকে আসা জ্ঞানকে গ্রহণ করার মতো মন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

২।লোভী বালক

অনি এবং রনি  এইদুই ভাই ছিল যমজ এবং এদের দুইজনকে সম্পূর্ণ একই রকমের দেখতে ছিল। তাদের দুজনকে এতটাই এক দেখতে ছিল যে তাদের মা-ও তাদেরকে আলাদা ভাবে চিনতে পারতো না।

তবে এই দুই ভাইকে দেখতে একই রকম হলেও তাদের চারিত্রিক গঠন এবং কাজকর্ম একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। অনির কোনো বন্ধু ছিল না , কিন্তু রনি  সহজেই বন্ধুত্ব পাতাতে সক্ষম ছিল। অনি মিষ্টি খেতে ভালোবাসতো কিন্তু রনি  ঝাল খাবার বেশী পছন্দ করতো। অনির মাকে বেশী পছন্দ ছিল এবং বাবা ছিল রনির প্রিয় মানুষ। সেইরকমই অনি ছিল ভীষনভাবে দয়াবান এবং স্বার্থহীন আর সেইজায়গায় রনি  ভীষন লোভী এবং স্বার্থপর।

অনি এবং রনি যখন বড়ো হলো তাদের বাবা তার সম্পত্তি এই দুই ভাইয়ের মধ্যে সমানভাগে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু রনি এই সিদ্ধান্তে রাজি ছিল না। সে তার বাবাকে বললো দুইভাইয়ের মধ্যে যে বেশী বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী সম্পত্তির ভাগ তার বেশী পাওয়া উচিত।

ভাইয়ের এই কথায় অনিও রাজি হলো। তাদের বাবা তখন দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি প্রতিযোগীতার আয়োজন করলেন।তিনি তার দুই ছেলেকে বললেন তারা যতটা পারে ততটা যেন হেঁটে যায় কিন্তু তাদের সূর্য ডোবার আগে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। যে ভাই বেশী দূরত্ব অবদি হেঁটে আবার সময়মতো ফিরে আসতে পারবে সেই ভাই বেশী সম্পত্তির অধিকারী হবে। তবে এই প্রতিযোগীতার একটি বিধিনিষেধ ছিল। কোনো ভাই-ই সময়ের হিসাব রাখার জন্য ঘড়ি ব্যবহার করতে পারবে না।

পরের দিন, কথা মতো অনি আর রনি হাঁটতে বেরোলো। তবে সেই দিন ভীষন রোদ উঠেছিল। অনি ধীরে ধীরে কিন্তু দৃঢ় ভাবে হাঁটছিল সেই জায়গায় রনি প্রথম থেকে জোরে জোরে দৌড়তে শুরু করেছিল সম্পত্তির লোভে জেতার আশায়।

অনি হিসাব করে নিয়েছিল দুপুর অবদি যতটা পারা যায় ততটা দূরত্বে গিয়ে তারপর বাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করলে তবেই সঠিক সময়ে বাড়ীতে পৌঁছানো যাবে। সেই হিসাবেই সে হাঁটা শুরু করলো।

কিন্তু অন্যদিকে রনি  সম্পত্তির লোভে ও চিন্তায় এতকিছু ভাবলোই না সে শুধু কতটা দূরত্ব জেতে পারবে সেই হিসাবই করতে লাগলো। বাড়ি ফেরার কথা তার মাথাতেই এলো না। সে অনির থেকে দুগুন বেশী দূরত্বে হেঁটে চলে গেলো এবং ভাবলো সে ঠিক সূর্যাস্তের আগে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হবে। কিন্তু ফিরে আসার সময় অর্দ্ধেক পথ আসার আগেই সে দেখলো সূর্য কমলা রঙে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। দূর্ভাগ্যবশত সূর্য যখন অস্ত যেতে শুরু করলো সে তখনো বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। ধীরে ধীরে চারিদিক অন্ধকারে ঢেকে সূর্য ডুবে গেলো এবং রনি  তার ক্লান্ত শরীরটাকে কোনোক্রমে টেনে টেনে বাড়িতে এসে ঢুকলো। রনি একমাত্র নিজের লোভের জন্যই সম্পত্তির অংশ হারালো।

নীতিকথাঃ

সহজ এবং দ্রূত পথে উপার্জনের লোভ এড়িয়ে যাওয়া ভীষণ কঠিন। যেমন গল্পে রনি চেয়েছিলো তাড়াতাড়ি বেশী পথ অতিক্রম করে প্রতিযোগিতায় অনিকে হারিয়ে বেশী সম্পত্তি হস্তগত করার। কিন্তু শেষমেশ হারতে হলো তাকেই। সবসময় মনে রাখতে হবে জীবনে সেই সফল হয় যে ধীর গতিতে হিসেব করে ধৈর্য্য ধরে এবং সৎপথে নিজের লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায়।

৩।গর্বিত সেগুন গাছ

একটি জঙ্গলে একটি সেগুন গাছ ছিল। সে সব গাছগুলোর তুলনায় লম্বা এবং শক্তিশালী ছিল বলে তার গর্বের অন্ত ছিল না। সেই সেগুন গাছের পাশেই এই ছোট্ট গুল্মের ঝোপ ছিল।

একদিন সেগুন গাছটি নিজের মনেই বলছিল, “আমি এই জঙ্গলের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে শক্তিশালী গাছ এবং এই জঙ্গলের কোনো গাছের ক্ষমতা নেই আমাকে হারায়”। সেগুন গাছের এমন গর্বিত কথা শুনে তার পাশে থাকা গুল্মের ঝোপ তাকে বললো, “ বন্ধু, এত গর্ব কিন্তু ভালো নয়। সবচেয়ে শক্তিশালী গাছও একদিন পড়ে যায়”।

গর্বিত সেগুন গাছ সেই তুচ্ছ গুল্মের কথা কানেই তুললো না। সে রোজ একই রকমভাবে নিজের প্রশংসায় নিজেই পঞ্চমুখ হতে লাগলো। ঝোড়ো বাতাসে এমনকি প্রবল বৃষ্টিতেও সেই সেগুন গাছ দিনের পর দিন তার গর্বিত মাথা তুলে ডাল-পালা বিস্তার করে জীবন কাটাতে লাগলো।

এইসময়ে ঝোড়ো বাতাস এবং বৃষ্টির কারণে গুল্মের ঝোপটা নুইয়ে পড়েছিল। তাই দেখে গর্বিত সেগুন গাছটি ওই ছোট্ট গুল্মকে উপহাস করতো।

তবে সেই ঝড় দিনের পর দিন আরও জোড়ালো হতে লাগলো। এতটাই জোড়ালো হলো যে সেগুন গাছও এবারে আর টাল সামলাতে পারছিলো না। সে ভীষনভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেছিল ঝড়ের মধ্যে কিন্তু শেষমেশ প্রকৃতির কাছে হার মেনে একদিন সে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো।

যখন পরিবেশ আবার আগের মতো শান্ত হলো তখন দেখা গেলো গুল্ম ঝোপটি তখনো দাঁড়িয়ে আছে মাটির ওপর এবং সে দেখলো গর্বিত সেগুন গাছটি ঝড়ের দাপট সামলাতে না পেরে তার সামনেই মাটিতে পড়ে গেছে।

নীতিকথাঃ

কখনোই জীবনে অতিরিক্ত গর্বিত হওয়া উচিত নয়। গর্ব যাতে পতনের মূল না হয়ে দাঁড়ায় সেইদিকে নজর রাখা অতি প্রয়োজনীয়।

এই তিনটি গল্প জীবনের তিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করতে সাহায্য করে।এই তিনটি নীতিকথা মেনে যদি জীবনকে চালানো যায় তাহলে সাফল্যের কাছাকাছি খুব সহজেই পৌঁছানো সম্ভব হবে। আপনার কি মনে হয়?আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে এবং লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।

আরও পড়ুনঃ স্টিভ জোবসঃ টেকনোলজির জগতে আলোরণ সৃষ্টিকারী এক ব্যক্তিত্ব!

Leave a Reply