নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস ইত্যাদি স্ট্রিমিং সার্ভিসের নেপথ্যের রহস্য এবার হবে উদঘাটন! জেনে নিন বিস্তারিত

0
1879
how-to-create-streaming-service

বর্তমানে টেলিভিশনের থেকে মানুষ বেশী নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস, টিকটক ইত্যাদির মতো স্ট্রিমিং সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর নেপথ্যের গল্পটা ঠিক কী? কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় চলে এই স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হলো আজকের এই পোস্টে।

নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস ইত্যাদির মতো আরও বিভিন্ন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস আছে যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভীষনভাবে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয়। যদিও এই সমস্ত স্ট্রিমিং সার্ভিসের মধ্যে নেটফ্লিক্সই সবথেকে বেশী জ নপ্রিয়। এই স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোতে থাকে কয়েকধরনের প্যাকেজ। সেই বিভিন্ন প্যাকেজ থেকে নিজের পছন্দ মতো প্যাকেজ বেঁছে নিলেই হাতের মুঠোয় চলে আসে লক্ষাধিক বিভিন্ন স্বাদের সিনেমা, শো, ভিডিও। কিন্তু আপনার কি কখনো মনে হয়েছে এই জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো তৈরী হয়েছে কীভাবে? সবথেকে বড়ো কথা এইধরনের উন্নতমানের স্ট্রিমিং সার্ভিস ইচ্ছা করলেই কী যে কেউ তৈরী করে ফেলতে পারে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তরই খোঁজার চেষ্টা হবে আজকের এই পোস্টে।

পোস্টের আলোচিত বিষয়গুলো হলোঃ

জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্স কাজ করে কীভাবে?

নেটফ্লিক্স হলো বর্তমানের সবথেকে বেশী জনপ্রিয় একটি স্ট্রিমিং সার্ভিস। এটি মূলত একটি SVOD (Subscription video on demand) সার্ভিস। এই স্ট্রিমিং সার্ভিসের মতো বিশাল ডেটাবেস অনেক জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সার্ভিসেরই নেই। এই স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীকে মাসিক কিছু মূল্য দিতে হয় এবং তাঁর পরিবর্তে ব্যবহারকারী পেয়ে যান সীমাহীন কন্টেন্ট অ্যাকসেসের সুযোগ। ব্যবহারকারী নেটফ্লিক্সকে তাঁর ইচ্ছামতো বিভিন্ন গ্যাজেটে এমনকি বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমেও ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারকারীরা প্রথম মাসে বিনামূল্যে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন। তারপর মাস শেষে এটি স্বয়ংক্রিয় সাবস্ক্রিপশন এবং ক্রয় অ্যাপে পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আইটিউনসের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করেন, তাহলে আইটিউনস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে।

নেটফ্লিক্স সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে নিজেদের আরও উন্নত করার। এছাড়াও প্রতিনিয়তই এই অ্যাপ যোগান দিয়ে যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের প্রচুর পরিমানে নতুন নতুন কন্টেন্ট। তবে নেটফ্লিক্সকে ওপর থেকে দেখে যা মনে হয় আসলে এটি কিন্তু তাঁর থেকে অনেকটাই বেশী।

  1. আপনি অ্যাপে আগে থেকে থাকা লাইব্রেরীতে আপনার পছন্দের কন্টেন্ট তালিকাভুক্ত করতে পারেন অথবা এই অ্যাপে থাকা সার্চ ফিচার ব্যবহার করে নিজের পছন্দের কন্টেন্ট খুঁজে নিতে পারেন।
  2. সিনেম্যাচ সিস্টেমের সাহায্যে, নেটফ্লিক্স আপনাকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী নতুন টিভি শো এবং চলচ্চিত্রের সাজেশন দিতে পারে।
  3. অ্যাপটি একটি অ্যাকাউন্টে পাঁচটি পৃথক প্রোফাইল তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
  4. নেটফ্লিক্সে প্রচুর স্ট্রিমিং ভিডিও সহজলভ্য।

একটিমাত্র নেটফ্লিক্স অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পাঁচজন আলাদা আলাদা সদস্য নিজেদের পছন্দ মতো কন্টেন্টের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন একই ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপে।

স্ট্রিমিং সার্ভিস তৈরী করতে গেলে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে?

এবার কেউ যদি চায় এবং এই বিষয়ে তাঁর যদি থাকে যথেষ্ট জ্ঞান তাহলে তাঁর পক্ষেও নেটফ্লিক্সের মতো জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সার্ভিস তৈরী করা অসম্ভব নয়। তবে তাঁর আগে তাঁকে কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে মাথা ঘামাতে হবে।

বিষয়বস্তু সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিতে হবে-

কিছু শুরু করার আগে, আসলে কী শুরু করা হচ্ছে সেই বিষয়ে বিশদে চিন্তা করা প্রয়োজন। সেইরকমই একটি স্ট্রিমিং সার্ভিস শুরু করার আগে ভালো ভাবে ভেবে নিতে হবে কোন বিষয়ের ওপর হবে এই স্ট্রিমিং সার্ভিস। কোন ধরনের কন্টেন্ট এই অ্যাপে দেখাতে চান সেই বিষয়ে আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। শো, ওয়েব সিরিজ নাকি মিউজিক্যাল সিরিজ কোনটি হবে আপনার বিষয়বস্তু সেই বিষয়ে পরিষ্কার একটি ধারনা থাকা চাই। এছাড়াও আপনি শিশুদের জন্য কন্টেন্ট বানাতে চান নাকি আপনার কন্টেন্ট হবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সেই বিষয়েও প্রথমে ভাবনা চিন্তা করা বিশেষ প্রয়োজন। নেটফ্লিক্সের মতো জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সার্ভিস তৈরী করতে গেলে সবার থেকে আলাদা ভিন্ন স্বাদের বিষয় নিয়ে হাজির করতে হবে দর্শকদের সামনে। তাঁর জন্য আগে থেকে নিতে হবে সিদ্ধান্ত।

নিজের স্টাইলকে চিনে নিতে হবে-

এখানে আপনার ওয়েবসাইট বা অ্যাপের জন্য আপনি কোন স্টাইল অবলম্বন করবেন সে বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আপনার অ্যাপের জন্য স্টাইল তৈরি করার দুটি উপায় আছে। প্রথমত, নেটফ্লিক্সের মতই একটি স্টাইল ব্যবহার করুন। কিছু প্রস্তুত টেমপ্লেট খুঁজুন এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট-এর সাহায্যে সেইগুলো আপনার অ্যাপে ব্যবহার করুন। দ্বিতীয়ত, শূন্য থেকে আপনার নিজস্ব স্টাইল তৈরি করুন। আপনি UI/UX সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির  সাথে যোগাযোগ করে আপনার ভবিষ্যৎ স্ট্রিমিং পরিষেবার জন্য একটি অনন্য স্টাইল নির্মাণ করতে পারেন। যদি নিজেকে একেবারে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে দ্বিতীয় উপায়টি অবলম্বন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আগে থেকে অস্তিত্ব আছে এমন মডেল-এর নকল করার চেয়ে আপনার নিজস্ব ব্যক্তিগত স্টাইল থাকা অনেক ভাল।

কন্টেন্ট প্ল্যানিং সঠিকভাবে করতে হবে –

যখন আপনি নেটফ্লিক্সের মত একটি ভিডিও স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন, তখন আপনার বিষয়বস্তু কি হবে তা নির্ধারণ করা আগে উচিত। কারণ বিষয়বস্তু ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসের মূল বিষয় এবং মূলত বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে যে অ্যাপটি কতটা আকর্ষণীয় হবে। সবার প্রথমে মাথায় রাখতে হবে, আপনি আপনার বিষয়বস্তু কতবার আপডেট করবেন – দৈনিক, মাসিক না সাপ্তাহিক? আপনি কি নেটফ্লিক্সের মতই টিভি সিরিজ থেকে শুরু করে সবরকমের ভিডিও একসাথে যোগ করবেন? নাকি আপনার বিষয়বস্তু আংশিকভাবে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে? এছাড়াও গ্রাহকদের দেখার জন্য কখন অর্থ প্রদান করতে হবে সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। মোট কথা সম্পূর্ণ নিজের একটি কন্টেন্ট প্ল্যান করা প্রয়োজন।

নিজের দর্শককে চিনতে হবে, বুঝতে হবে-

স্ট্রিমিং সার্ভিস তৈরী করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  ধাপ হচ্ছে আপনার টার্গেট শ্রোতা খুঁজে বের করা। কয়েকটি উপায় আছে যার মাধ্যমে এই নির্ধারণ সহজে করা সম্ভব। প্রথমত,

সোশ্যাল মিডিয়াঃ

জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্ক যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিকে ব্যবহার করে সহজে টার্গেট অডিয়েন্স খুঁজে বের করা সম্ভব। আপনার অ্যাপ প্রচার করতে এবং সঠিক টার্গেট শ্রোতা খুঁজে পেতে এই সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার অ্যাপের ভিডিও শেয়ার করে প্রচার করা শুরু করুন। এছাড়াও ইউটিউব ব্যবহার করুন এবং তাতে এই সংক্রান্ত ভিডিও ছাড়ুন। ইউটিউব কিংবা এই ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ড প্রমোশনের জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ইঞ্জিন, তাই আপনার সার্ভিসের প্রতি মানুষের মনে একটি বিশ্বাসযোগ্য মনোভাব গড়ে তুলতে এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করুন। দ্বিতীয়ত,

নিউজলেটার সাজানঃ

আপনার পণ্যের বিস্তারিত বর্ণনা সহ আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের ইমেল করুন। এই ইমেল গুলোকে উদ্ভাবনশীলতা কাজে লাগিয়ে যথেষ্ট আকর্ষণীয় করে তুলুন। এই উপায়ে টার্গেট অডিয়েন্সকে টেনে আনা সম্ভব।

সম্ভব হলে একাধিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে-

আপনি যদি নেটফ্লিক্সের মত একটি স্ট্রিমিং সার্ভিস নির্মাণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই ওয়েবসাইটের সাথে সাথে একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরী করার কথাও আপনার মাথায় রাখা উচিত। একথা সর্বজনবিদিত যে বেশীরভাগ ব্যবহারকারী কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের বদলে তাদের মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করেই এই স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো অ্যাকসেস করে থাকেন।  

অতএব একটি বিষয় পরিষ্কার যে আপনার সার্ভিসের একটি মোবাইল সংস্করণ অবশ্যই এই ধরনের ব্যবহারকারীদের বিকল্প হিসাবে বানাতেই হবে। আপনি যদি শুধুমাত্র একটি প্রতিক্রিয়াশীল বা অভিযোজিত ওয়েবসাইট সংস্করণের মাধ্যমে এই সার্ভিস শুরু করতে চান তবে তা  কিন্তু হবে মস্ত বড় ভুল। একটি স্ট্রিমিং সার্ভিস যদি মোবাইলের মাধ্যমেও অ্যাকসেস করা সম্ভব হয় তাহলে সেই সার্ভিসের জনপ্রিয়তার মাত্রা আরও বেশী করে বৃদ্ধি পায়।

আপনার কি মনে হয়? আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে এবং লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। 

আরও পড়ুনঃ আন্তর্জালিক অর্থের তত্ত্বতালাশ!-জেনে নিন Bitcoin সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য!

Leave a Reply