আন্তর্জালিক অর্থের তত্ত্বতালাশ!-জেনে নিন Bitcoin সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য!

0
2091

অন্তর্জাল অর্থাৎ ইন্টারনেট বিশ্বে রয়েছে একধরনের অর্থ যার নাম Bitcoin। অনেকেই এর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত থাকলেও আসলে এর গুরুত্ব কতটা এবং এর কাজ কী সেই সম্বন্ধে আজও আছে আঁধারে। তাই আজ সেই আঁধার থেকেই আলোর পথে যাত্রা শুরু হোক এই পোস্টের মাধ্যমে। জেনে নিন Bitcoin সম্বন্ধিত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

Bitcoin সম্বন্ধে অনেকের মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন বর্তমান। অনেকে এর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানলেও বেশীরভাগ মানুষই জানেন না এই Bitcoin-এর অস্তিত্ব। Bitcoin কী এবং এটি কাজ করে কীভাবে ইত্যাদি যাবতীয় প্রশ্ন মানুষের মাথায় আসে Bitcoin-এর নাম শোনার সাথে সাথে। এই প্রশ্নের মধ্যে সবচেয়ে বেশী যেই প্রশ্নটি আসে সেটি হলো, এই Bitcoin-এর মূল্য আসলে কী? এটিকে কি আমাদের সাধারন অর্থের মতো ব্যয় করা যায় নাকি একে ব্যয় করতে হলে অন্য রাস্তা নিতে হয়। সবথেকে বেশী ভাবায় যেই ব্যাপারটি সেটি হলো এই Bitcoin-এর সাথে অন্তর্জালের অন্ধকার জগত অর্থাৎ Dark Web-এর কোনো সম্বন্ধ নেই তো? ইত্যাদি বহু কৌতুহল আছে আন্তর্জালিক এই অর্থকে ঘিরে। আজ এই পোস্টে সেই সমস্ত কৌতুহলের নিরসন করার চেষ্টা করা হলো। এখন জেনে নেওয়া যাক Bitcoin সম্বন্ধিত খুঁটিনাটি তথ্য।

পোস্টে আলোচিত বিষয়ঃ

Bitcoin কী?

Bitcoin কী তা বুঝতে হলে ক্রিপটোকারেন্সি সম্বন্ধে জানতে হবে। তাহলে আগে জানা যাক ক্রিপটোকারেন্সি কী!

  • ক্রিপটোকারেন্সিঃ  ক্রিপটোকারেন্সি হলো আসলে ডিজিটাল অর্থ। এমনকি এই ডিজিটাল অর্থকে আসল অর্থের থেকে অনেক বেশী সুরক্ষিত বলে মনে করা হয়। ক্রিপটোকারেন্সির সুরক্ষিত ট্র্যান্সস্যাকশনের জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রিপটোগ্রাফির। যদি সহজ ভাষায় বলা যায় তাহলে ক্রিপটোগ্রাফি সহজ তথ্যকে বদলে দেয় কঠিন দূর্বোধ্য সমস্ত কোড-এ, যাতে হ্যাকাররা সহজে হ্যাক করতে না পারে। ডিজিটাল্ কারেন্সির একটি শাখাই হলো ক্রিপটোকারেন্সি। এছাড়াও একে ভার্চুয়াল কারেন্সিও বলা যায়।

Bitcoin নামক এই ক্রিপটোকারেন্সিটি তৈরী হয় ২০০৯ সালে। এবং তারপর থেকেই বহু ক্রিপটোকারেন্সি ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আসতে শুরু করে। এই ধরনের কয়েকটি ক্রিপটোকারেন্সির নাম হলো- Litecoin, Ethereum, Zcash, Dash, Ripple ইত্যাদি।

Bitcoin-এর নাম অনেকেই বহুদিন অবদি জানতোই না। কিন্তু টেকনোলজির কল্যানে এখন অনেকেই অবগত এই ব্যাপারে এবং অনেক টেক বিশেষজ্ঞরা Bitcoin-এর ব্যাপারে রীতিমতো উৎসাহিত। ভারতেও ধীরে ধীরে Bitcoin-এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিশেষত যখন থেকে ভারত সরকারের তরফ থেকে ক্যাশবিহীন অর্থনীতি গড়ে তোলার বিষয়টি শুরু হয়েছে তখন থেকেই এই জনপ্রিয়তাও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটা জেনে রাখা দরকার Bitcoin কিন্তু কোনো ব্যাঙ্কের দ্বারা পরিচালিত হয় না। এমনকি Bitcoin-এর ট্র্যান্সস্যাকশনের জন্য প্রয়োজন হয় ব্লকচেন টেকনোলজির, যার মাধ্যমে নির্বিঘ্নে এই আন্তর্জালিক অর্থ আদান-প্রদান করা সম্ভব হয়।

কীভাবে Bitcoin কাজ করে?

Bitcoin কীভাবে কাজ করে এই প্রশ্নটি অনেকেরই মনে ঘুরপাক খায়। Bitcoin আসলে একটি কম্পিউটার ফাইল যা ব্যবহারকারীর স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপে জমা থাকে। একজন ব্যবহারকারী অন্যজনকে এই ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে Bitcoin দিতে পারেন। এই প্রত্যেকটি ট্র্যানস্যাকশন কিংবা আদান-প্রদানই রেকর্ড করা থাকে ব্লকচেন-এ। এই রেকর্ডই সমস্ত Bitcoin-এর অবস্থান খুঁজে বের করতে কিংবা Bitcoin-এর হ্যাকিং ইত্যাদি রুখতে ব্যবহার করা হয়।

কীভাবে Bitcoin পাওয়া যায়?

অর্থ উপার্জন করার সাধারণ পদ্ধতি নয়। কিছু বিশেষ পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে এই Bitcoin অর্জন করা সম্ভব হবে। এখন সেই পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।

  • মাইনিংঃ মাইনিং হলো একটি কম্পিউটার দ্বারা পরিচালিত অ্যাক্টিভিটি যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী অর্থাৎ ‘মাইনার’কে নিজের কম্পিউটার পরিচালনার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার দ্বারা সংগঠিত কঠিন সমস্ত পাজেল কিংবা ধাঁধাঁ সমাধান করতে হয়। এই কঠিন ধাঁধাঁ যদি মাইনার সফলভাবে সমাধান করতে পারেন তাহলে পুরষ্কার স্বরুপ তিনি পেয়ে যান একটি নতুন বিটকয়েন। এই ধাঁধাঁ সমাধান করার পদ্ধতিকেই বলা হয় মাইনিং। এই মাইনিং আসলে ব্লকচেনেরই একটি অংশ।
  • আসল অর্থের বিনিময়ে কেনা যায়ঃ মাইনিং করে Bitcoin অর্জনের দক্ষতা সবার মধ্যে থাকে না। তাই ব্যবহারকারী চাইলে আসল অর্থ খরচ করে Bitcoin এক্সচেঞ্জ থেকে Bitcoin কিনে নিজের অনলাইন ডিজিটাল ওয়ালেটে সেইগুলোকে জমিয়ে রাখতে পারে। ভারতবর্ষেও কিছু Bitcoin এক্সচেঞ্জ রয়েছে যার মাধ্যমে Bitcoin কেনা সম্ভব হয়। সেইরকমই কিছু Bitcoin এক্সচেঞ্জ-এর নাম হলো- Zebpay, Unicorn, Coinbase, Bitxoxo ইত্যাদি। এই সমস্ত Bitcoin এক্সচেঞ্জ থেকে আসল অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে Bitcoin কেনা সম্ভব হয়। তবে Bitcoin-এর মূল্য আসল অর্থে কিন্তু বেশ অনেকটাই বেশী। একটি Bitcoin-এর মূল্য এখন প্রায় ৩,৬১,৬১০ টাকা।
  • জিনিসপত্র বিক্রির বদলে Bitcoin-এ মূল্য নেওয়াঃ এই ব্যাপারটা যদিও এখনো আমাদের দেশে অতটাও প্রচলিত হয় নি। তবে টেকনোলজির জগতে এমন অনেক কোম্পানিই আছে যারা Bitcoin-এর পরিবর্তে জিনিসপত্র বিক্রি করে কিংবা কিনে থাকে। এইভাবেও Bitcoin অর্জন করা সম্ভব।

Bitcoin গুরুত্বপূর্ণ কেন?

যেকোনো জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ হয় যখন মানুষ তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। সেই রকমই ব্যাপার Bitcoin-এর ক্ষেত্রেও। যেমন আমরা আসল অর্থ ছাড়াও সোনা কিংবা হিরেকে মূল্যবান হিসাবে মনে করে থাকি। ঠিক সেইরকমই Bitcoin-এর মাধ্যমে অনেক জিনিস টেকনোলজির জগতে কেনা-বেচা করা সম্ভব বলেই এই আন্তর্জালিক অর্থের গুরুত্ব এতটা বেশী।

ভারতে Bitcoin-এর ব্যবহার কী আইনত?

আগেই বলা হয়েছে ভারতবর্ষে ইন্টারনেটের এই অর্থের আদান-প্রদান চললেও, এই অর্থ কিন্তু কেন্দ্র শাসিত কোনো ব্যাঙ্ক দ্বারা প্রচলিত হয় না। শুধু কেন্দ্রশাসিত কেন পৃথিবীর কোনো ব্যাঙ্ক দ্বারাই এটি পরিচালিত হয় না। তাই Bitcoin-এর ক্ষেত্রে সেই রকমের কোনো বাঁধাধরা নিয়ম কানুন নেই। তাই যেহেতু কোনো লিখিত বাঁধাধরা নিয়মকানুন নেই সেহেতু এই Bitcoin ব্যবহারের নিজস্ব কিছু ঝুঁকি থেকেই যায়। তবে ঝুঁকি থাকলেও Bitcoin কিন্তু ভারতবর্ষে নিষিদ্ধ নয়।নিজস্ব ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহারকারী এই অর্থের আদান-প্রদান করতেই পারেন। শুধু এর দায় কোনো মতেই ভারত সরকার নেবেন না। তবে শোনা গেছে ক্রিপটকারেন্সির নিয়মকানুন সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভেবে দেখছে সরকার।

Bitcoin ব্যবহার করা কী সুরক্ষিত?

সাধারন অর্থের চেয়ে আন্তর্জালিক এই অর্থকে অনেক বেশী সুরক্ষিত বলে মনে করা হয় টেকনোলজির জগতে। যেহেতু Bitcoin-এর প্রত্যেকটি আদান-প্রদান জনসমক্ষে ব্লকচেনের মাধ্যমে রেকর্ড হয়ে থাকে তারজন্যই এই Bitcoin-এর কপি বানানো ভীষন ভাবে কঠিন। তাই নকল Bitcoin বানিয়ে সেটিকে নিজের ইচ্ছামতো খরচ করা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে অতটাও সহজ নয়। তবে Bitcoin-এর নকল না করতে পারলেও কোনো ব্যবহারকারীর Bitcoin হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। যদি ভুল করে ব্যবহারকারী তার Bitcoin ওয়ালেট হারিয়ে ফেলেন ইণ্টারনেটে কিংবা নিজের ভুলবশত নিজের অর্জিত Bitcoin ডিলিট করে দেন তাহলে সেইগুলোকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। এছাড়াও যেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি Bitcoin স্টোর করেছিলেন সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে Bitcoin চুরি হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। এছাড়াও যেহেতু Bitcoin মূল্য প্রত্যেক বছরে ওপর-নীচ হয় তাই অনেকের মতেই আসল অর্থকে Bitcoin-এর রূপান্তরিত করে রাখাও খুব একটা সুরক্ষিত নয়। তাই বলাই যায় হ্যাকিং-এর আশঙ্কা না থাকলেও অন্য উপায়ে Bitcoin চুরি কিংবা হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা থেকেই যায়।  

মানুষ Bitcoin ব্যবহার করতে চায় কেন?

অনেক মানুষই আছেন যারা ব্যাংকের ওপর ভরসা করতে পারেন না, তাদের ক্ষেত্রে নিজের অর্থ জমিয়ে রাখার জন্য Bitcoin একটি ভালো অপশন। এছাড়াও ব্যবহারকারী নিজের নাম লুকিয়ে Bitcoin ব্যবহার করে জিনিসপত্র বেচা-কেনা করতে পারেন। যদিও সমস্ত আদান-প্রদানের রেকর্ডই থাকে। কিন্তু সেই সমস্ত রেকর্ড ‘অ্যাকাউন্ট নাম্বার’ অনু্যায়ী থাকে। সেখানে ব্যবহারকারীর নামের কোনো উল্লেখ থাকে না। তাই ব্যবহারকারী স্বচ্ছন্দে আড়ালে থেকে Bitcoin-এর আদান-প্রদান করতে পারেন।

আপনার কি মনে হয়?আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে এবং লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। 

আরও পড়ুনঃ Tech-এ হোক বাজিমাত- ২৫টি ভিডিও আইডিয়ায় টেক-ভিত্তিক Youtube চ্যানেল হয়ে উঠুক আকর্ষণীয়!

Leave a Reply