বাংলা ভাষার ইতিহাস কী? এর শুরু হলো কোথা থেকে? জেনে নিন সব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর!

0
32558

বাংলা ভাষাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ভাষাগুলোর মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। বাংলা ভাষার ইতিহাস অত্যন্ত পুরোনো। ভাষা ইন্দো-ইওরোপিয়ান ভাষার ইন্দো-ইরানিয়ান ব্র্যাঞ্চের ইন্দো-আর্য গ্রুপের একটি অংশ।পৃথিবীর ২১০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলে, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে।বাংলাদেশের যোগাযোগের প্রধান ভাষাই হলো বাংলা ভাষা।ভারতের পুরোটা জুড়ে এই ভাষার প্রচলণ না থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরা এইসমস্ত রাজ্যে বাংলা ভাষা সগৌরবে বিরাজমান।শুধু তাই না আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনের মতো দেশেও বাঙালীর অস্তিত্ব সমানভাবে দেখা যায়।

বাংলা ভাষার ইতিহাস

শোনা যায় ওড়িয়া, অসমিয়া এবং বাংলা ভাষা একই উৎস থেকে এসেছে।পরবর্তীকালে প্রথমে ওড়িয়া এবং পরে অসমিয়া আলাদা হয়ে গেছে এই উৎস থেকে।এই কারণেই বাংলা ভাষা সাহিত্যের সবচেয়ে পুরনো নিদর্শন ‘চর্যাপদ’কে অসমিয়া এবং ওড়িয়া ভাষা সাহিত্যেরও উৎস বলে মনে করা হয়।

বাংলা ভাষা সাহিত্যের দুই দ্বিগজ সুনিতি কুমার চ্যাটার্জী এবং সুকুমার সেন জানান যে বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময় দশম শতাব্দীর আশেপাশে এবং এই ভাষা মাগধী প্রাকৃত থেকে সৃষ্ট হয়ে মাগধী অপভ্রংশের মাধ্যমে এখন বর্তমানের বাংলা ভাষায় পরিণত হয়েছে।যদিও এই মতামতের দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অনেক বাংলা সাহিত্যের পন্ডিত।

যদিও বাংলা ভাষা ইন্দো-ইওরিপিয়ান ভাষার অংশ থেকে উৎপত্তি ঘটেছে তবুও এই ভাষার মধ্যে দক্ষিন-এশিয়ার অন্যান্য ভাষার প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়।১৯৬০ এবং ৭০-এর দশকে সুনিতি কুমার চ্যাটার্জী বাংলা ভাষার অভিধান পরীক্ষা করে দেখেন এবং তিনি দেখতে পান বাংলা ভাষার বেশীর ভাগ ভাষা আসলে সংস্কৃত ভাষার অপভ্রংশ এবং বাকী শব্দ এসেছে কোনো না কোনো বিদেশী ভাষার প্রভাবে।বাংলা ভাষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্সি ভাষারও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে বাংলা ভাষায় মিশেছে অনেক পরিমানে বিদেশী ভাষার বেনো জল।প্রচলিত বাংলা ভাষায় এখন প্রচুর পরিমানে বিদেশী ভাষার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

বাংলা ভাষায় বিভিন্নতা

বাংলা ভাষার দুটি দিক বর্তমান।একটি হলো সাধুভাষা এবং অপরটি হলো চলিত ভাষা। বাংলা সাহিত্যের আদিযুগ থেকে সাধু ভাষা বাংলা ভাষায় প্রচলিত।কাব্যে এবং সাহিত্যে লেখক এবং কবিরা এই ভাষাই প্রয়োগ করে থাকতেন।উনবিংশ শতাব্দী থেকে এই সাধু ভাষা কাব্য ছাড়াও সাধারন যোগাযোগের এবং ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার হতে শুরু করে।বক্তৃতার ক্ষেত্রে এই ভাষার প্রয়োগ ঘটলেও সাধারণ নিত্যদিনের কথাবার্তা সাধু ভাষায় কখনোই হতো না।

ভাগিরথী নদীর পাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল এবং কোলকাতাতে প্রথম প্রচলিত হয় চলিত ভাষা।বিংশ শতাব্দী থেকে এই ভাষার প্রভাব বাংলা সাহিত্যতেও পড়তে শুরু করে।একবিংশ শতাব্দী থেকে বাংলা ভাষার এই ধরন বাংলা সাহিত্যের মূল প্রবাহে চলে আসে।বর্তমানে যেমন চলিত বাংলা ভাষায় আমাদের কথোপকথন করি সেইরকমই সাহিত্যের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয় সেই একই ভাষা।সাধুভাষার অলঙ্কারগুলোই আরও সোজা হয়ে চলে এসেছে চলিত ভাষায়।যদিও এই দুই ভাষার প্রকারের শব্দভান্ডারের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক।

যদিও বাঙালীদের সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধর্ম-এর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার প্রকারে বিভিন্নতা দেখা যায়।সবচেয়ে বেশী বাংলা ভাষার বিভিন্নতা চোখে পড়ে আঞ্চলিক দিক থেকে।এই বিভিন্নতা যেমন ভারতের বাঙালীদের ভাষায় দেখা যায় সেইরকমই বাংলাদেশের বাঙালীদের ভাষাতেও চোখে পড়ে।বাংলাদেশের মুখ্য ভাষা হলো বাংলা।তবে বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলা উচ্চারণ এখানে ভিন্ন রকমের হয়।

লিখিত বাংলা ভাষা

বাংলা লিখিত ভাষার উৎপত্তি ভারতের সবচেয়ে পুরোনো দুটি  লিপির মধ্যে একটি  লিপি থেকে।সেই  লিপির নাম হলো ব্রাক্ষ্মী।যদিও লিখিত বাংলা ভাষা যেকোনো একটি জায়গা থেকে আসে নি।অনেকের মতে এই ভাষার লিখিত রূপের ওপর প্রভাব আছে দেবনাগরী এবং ওড়িয়া  লিপির।দ্বাদশ শতাব্দী নাগাদ বাংলা অক্ষর প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে আসে, যদিও বাংলা অক্ষর পুরোপুরিভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করে ষোড়শ শতাব্দীতে।

আপনার কি মনে হয়?আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে এবং লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।

আরও পড়ুনঃ দারিদ্রতা কাটিয়ে ধনী হওয়ার তিনটি উপায়!

Leave a Reply