বর্তমানের আধুনিক টেকনোলজির আসল উৎপত্তি স্থল কিন্তু সেই পুরানে! কীভাবে আসুন দেখে নেওয়া যাক

0
2034

আমাদের ভারতবর্ষ বহু আগে থেকে অনেক বিষয়ে সবার আগে এগিয়ে থাকে।এই দেশের রঙ, রস, রূপ যেমন একে অন্যান্য সমস্ত দেশের থেকে আলাদা করে তোলে সেইরকমই এই দেশের মানুষের ভাবনা-চিন্তাও সারা বিশ্বের লোককে বিষ্ময়ে হতবাক করে দেয়।আজ যেই বিষয় নিয়ে সারা বিশ্ব ভাবছে খোঁজ করলে দেখা যাবে সেই বিষয় নিয়ে অনেক আগেই ভারতে ভাবা হয়ে গেছিল।

সেইরকমই অনেক নিদর্শন আমরা পেয়ে যাই আমাদের ইতিহাসে,সংস্কৃতিতে এবং সর্বোপরী ধর্মে।হ্যাঁ, ঠিকই তাই!যে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের প্রায় কোনো সম্বন্ধই নেই সেই ধর্মেই পাওয়া যায় আধুনিক বিজ্ঞানের সমস্ত নিদর্শন।বর্তমান কালের বহু আধুনিক টেকনোলজি আমাদের বহু পুরোনো মাইথোলজিতে ভাবা হয়েছে সবার আগে।

ভারতীয় বেদ পুরানে আমরা যে হিন্দু ধর্মের কাহিনী শুনি তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই।অনেকের মতে মহাভারত এবং রামায়ন সত্যই ঘটেছিল আবার অনেকের মতে এই কাহিনী শুধু মাত্রই অলীক কল্পনা মাত্র।এই দ্বন্ধ সহজে মিটবার নয়।তবে এতো ধ্রূব সত্য এই কাহিনী লেখা হয়েছে বহু প্রাচীনকালে যখন বিজ্ঞানের অস্তিত্ব থাকলেও এই শব্দটি ছিল লোকের কাছে অজানা।সেই সময় দাঁড়িয়ে ভারতীয় প্রাচীন মুনি-ঋষিদের কলমে ফুটে উঠেছিল অভিনব কিছু টেকনোলজির ভাবনা।যা আধুনিক কিছু টেকনোলজির সাথে মিলে যায় হুবহু।এখন দেখে নেওয়া যাক সেই সমস্ত ভাবনার কয়েকটি নিদর্শন।

১।টেস্টটিউব বেবি

একেবারেই ঠিক শুনেছেন!বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানের সহায়তায় সম্ভব হয়েছে টেস্টটিউব শিশুর জন্ম।তবে আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে পুরানে এই ধরনের একটি ঘটনার দৃষ্টান্ত আমাদের চোখে পড়ে।

ব্যাসদেব রচিত মহাকাব্য মহাভারতে গান্ধারী পেয়েছিলেন শতপুত্রের বর।কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই একসাথে শত পুত্র প্রসব করা ছিল একেবারেই অসম্ভব।ফলত গান্ধারী প্রসব করেছিলেন শত পুত্রের ভ্রুন যুক্ত ডিম্বাশয়।জন্মের পরবর্তীতে মহাঋষি ব্যাসদেব সেই ডিম্বাশয় থেকে শত পুত্রের ভ্রূনকে আলাদা করে তিনি জারিত করেন আলাদা আলাদা একশোটি বদ্ধ পাত্রে।এরপর সঠিক সময়ে সেই পাত্রতেই একশোটি ভ্রুন পূর্ণ শিশুর আকার ধারন করে জন্মগ্রহন করে।

এবার আসি আধুনিক বিজ্ঞানের কথায়।আইভিএফ-এ এইভাবেই টেস্টটিউবে স্পার্ম এবং ওভিউম-এর জারণ ঘটিয়ে সৃষ্ট করা হয় ভ্রূন মাতৃগর্ভের বাইরে।এরপর সেইটিকে প্রবেশ করানো হয় মাতৃগর্ভে ভ্রূনটির পূর্ণতা পাওয়ার জন্য।মহাভারতের সাথে এটির একমাত্র ফারাক এই যে মহাভারতে একশোজন কৌরবের ভ্রুনকে আর মাতৃগর্ভে প্রবেশ করানো হয় নি।

২।উড়োজাহাজ(এরোপ্লেন কিংবা হেলিকপ্টার)

বর্তমানে কোথাও চটজলদি যাওয়ার জন্য আমাদের সাহায্য করে এই উড়োজাহাজ, বিজ্ঞানের আরেকটি বড়ো উপহার।তবে বিজ্ঞানের এই আবিষ্কারের কথাও পাওয়া যায় ভারতীয় পুরানে।

রামায়নের গল্প আমাদের সকলেরই জানা।সেখানেই লঙ্কার রাজা রাবন সীতাকে হরণ করে নিয়ে যায় পুষ্পক রথে চেপে।পুরানে এই রথের বর্ননাতে বলা হয়েছে এই বিমান আকাশপথে চলে এবং এই রথ টানে পক্ষীরাজ ঘোড়া কিংবা দুটি সাদা রাজহাঁস।

এই কথাতো মানতেই হবে যে পুরানের এই পুষ্পক বিমানের সাথে বর্তমানের এরোপ্লেন বা হেলিকপ্টারের অসম্ভব মিল পাওয়া যায়।অতএব বর্তমানের এই টেকনোলজিটিও ভারতের মানুষের মস্তিষ্কে অনেক আগেই ধরা পড়েছিল।

৩।সমূদ্রের ওপরে সেতু তৈরী করা

পুরানের রাম সেতু হলো ভারতীয় ভাস্কর্যের অন্যতম নিদর্শন।ধর্মের ব্যাখ্যা অনুযায়ী হনুমান ভগবান রামের নাম লেখা পাথর সমূদ্রে ফেলে সেই সেতু নির্মান করে।হিন্দু ধর্মে দাবি করা হয় সেই পাথরে ভগবান রামের নাম লেখা ছিল বলেই সেই পাথর ডুবে না গিয়ে ভেসে পথ তৈরী করেছিল।তবে বিজ্ঞান জলে পাথর ভাসার এই ঘটনাকেও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়েছে।

৪।অঙ্গ প্রতিস্থাপন

বর্তমান যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী দিক হলো অঙ্গ প্রতিস্থাপন।তবে এই ঘটনার কথাও আছে সেই আদিকালের পুরানে।

মহাদেব রেগে গিয়ে যখন তার কনিষ্ঠ পুত্র গণেশের মাথা কেটে দেন তখন মাতা পার্বতীর আদেশে পুত্রের জীবন রক্ষার জন্য সেই মাথায় বসানো হয় হাতির মাথা।পুরানের এই ঘটনাই প্রমান দেয় বর্তমানের যুগান্তকারী অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিন্তা অনেক আগের ভারতীয় মুনি-ঋষির ধারনায় এসেছিল।

৫।হিউম্যান ক্লোনিং

বর্তমানে অত্যাধুনিক ক্লোনিং এর চিন্তাধারার বীজ কিন্তু লুকিয়ে ছিল ভারতীয় পুরানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

পুরানে কথিত আছে, সীতার গর্ভে জন্মায় তার একমাত্র পুত্র লব।কিন্তু দূর্ঘটনাবশত লব জঙ্গলে হারিয়ে গেলে ক্রন্দনরত সীতাকে শান্ত করার জন্য বাল্মীকি মুনি ধানের কুশ থেকে তৈরী করেন লবের মতো হুবহু দেখতে একটি বালককে, যার নাম দেন কুশ।পরবর্তীকালে লব ফিরে এলে সীতার তার দুই পুত্রকেই জমজ সন্তানের মতো সমান স্নেহে বড়ো করে তোলেন।

৬।যুদ্ধের সরাসরি সম্প্রচার

বর্তমানকালের গণমাধ্যম তখন এক অলীক স্বপ্ন মাত্র কিন্তু সেই সময়ের পুরানে ধরা পড়ে যুদ্ধের সরাসরি সম্প্রচারের ঘটনা।

মহাভারতে পান্ডব ও কৌরবদের মধ্যে ভীষন যুদ্ধ বেধেছিল কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে।অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পক্ষে এই যুদ্ধে যোগদান করা কিংবা এই যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করা ছিল অসম্ভব।কিন্তু তিনি যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে ছিলেন চিন্তিত।তখনই তার রথের চালক সঞ্জয় তার দিব্যদৃষ্টির মাধ্যম যুদ্ধের সব ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকে ধৃতরাষ্ট্রের কাছে।

এভাবেই সেই পুরাকালে সৃষ্টি হয় বর্তমানের গণমাধ্যমের চিন্তাধারা।

আজকের পোস্টে আমরা মাত্র কয়েকটি এই ধরনের আশ্চর্য মাইথোলজি এবং টেকনোলজির মেলবন্ধনের হদিশ দিলাম।তবে এই ধরনের আরও অনেক ঘটনার উদাহরণ পাওয়া যায় ভারতীয় হিন্দু ধর্মের পুরানে।এখন প্রশ্ন হলো সেই আদিকালে আজকের মতো এমন আধুনিক চিন্তাধারার উন্মেষ যখন ঘটেছিল, তখন মানুষ তবে ভুলে গেল কেন সেই সমস্ত অদ্ভুদ আবিষ্কারকে?এই প্রশ্নের উত্তর কী কখনো আর পাওয়া সম্ভব?

আপনার কি মনে হয়?আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে এবং লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে। 

Leave a Reply