শিক্ষক থেকে ই-শিক্ষক!পরিবর্তন কি সহজ ছিল?

0
472

আজ ৫ই সেপ্টেম্বর, আজ প্রত্যেক বছরের মতো সারা ভারত জুড়ে পালন করা হচ্ছে শিক্ষক দিবস।শিক্ষক হলেন এমন একজন মানুষ যিনি এই সমাজ গঠনের কাজে প্রত্যক্ষ ভাবে সাহায্য করেন।শিক্ষার্থীদের সঠিক ভাবে মানুষ করে তোলার জন্য, তাদের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক সবসময়ই তৈরী থাকেন।প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের কল্যানের জন্য শিক্ষাদানের সনাতনী প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন কিছু শিখতেও তারা পিছপা হন না।শিক্ষকদের সেইরকমই এক প্রচেষ্টার নিদর্শন দেখা গেছে এই কয়েক মাসের মধ্যে।

বর্তমানে সারা বিশ্ব এক ভয়ঙ্কর অতিমারীতে আক্রান্ত।এর কারনে দেশের সমস্ত ক্ষেত্রের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রও হয়েছে ভীষনভাবে বিপর্যস্ত।কিন্তু প্রথম কিছুদিন স্কুল-কলেজের ক্লাস সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে গেলেও, কিছু দিন পর থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন স্কুল কলেজ শুরু করে দিয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা দানের কাজ।

অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে বর্তমান যুগের ছাত্রছাত্রীরা পরিচিত হলেও আধুনিক যুগের ই-ওয়ার্ল্ডের সাথে কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার পরিচিতি বিশেষ ভাবে এখনো হয়নি।বেশীরভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকা এখনো পুরনো প্রচলিত পদ্ধতিতেই শিক্ষা দান করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।তাদের অনেকের কাছেই ভার্চুয়াল জগতের আদব-কায়দা সম্পূর্ণভাবে অপরিচিত।কিন্তু শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তারা আস্তে আস্তে নিজেদের অনলাইন জগতের সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

টেকনোলজি জগতের কাছে এখন শিক্ষকরাই হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থী।নোটস বানানো থেকে প্রসেন্টেশন বানানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বোঝানো সবটাই করতে হচ্ছে তাদের ডিভাইসের স্ক্রিনের মাধ্যমে।শিক্ষার্থীদের পড়ানোর বিষয় বোধগম্য হচ্ছে কিনা সামনে না থাকলেও বুঝে নিতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।অনেক শিক্ষকদের কাছে হয়তো নেই প্রয়োজনীয় ডিভাইস ক্লাস নেওয়ার জন্য আবার বেশীরভাগ শিক্ষকই হয়তো জানেন না ডিভাইসের কারীকুরি কিন্তু শিক্ষার্থীদের কল্যানার্থে তাদেরও বহু কষ্টে নিজেদেরকে টেকস্যাভি করে তুলতে হচ্ছে। অতিমারীর কারণে সমস্ত কাজ স্থগিত থাকলেও সমাজের এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বরা বন্ধ রাখতে দেন নি সমাজ গঠনের কাজ।

এই অতীমারিতে সব কাজের ক্ষেত্রের মানুষের অসুবিধা নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা বলা হলেও শিক্ষকদের অনুদান নিয়ে মাথা ঘামানো হয় নি বিশেষ।শিক্ষকরা ঘরে বসে ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা দান করলেও নিজেদের বহু কষ্টে টেকনোলজির সাথে খাপ খাইয়ে ছাত্রছাত্রীদের সমস্তরকম সাহায্য করে চলেছেন।

গুগল মিট, স্কাইপ, জুম মিটিং ইত্যাদির নামও যারা কখনো শোনেননি তাদের এখনো এই গুলি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রন করা, শিক্ষা দান করা এবং তাদের থেকে হোমটাস্ক আদায় সমস্তটা করে নিতে হচ্ছে।এর ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বহু শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাও কিছু ক্ষেত্রে নষ্ট হচ্ছে।এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সময় কিছু টেকনোলজি সংক্রান্ত ভুল করে থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে হচ্ছেন হাসির খোড়াক।এতকিছুর পরও হাল ছাড়ছেন না তারা।তাদের সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত জীবন স্বাভাবিক রাখার এই অতিমারীর সময়ও।

যেই মানুষগুলো প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের ভালোর কথা চিন্তা করে যাচ্ছেন, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা যাতে না ব্যহত হয় তার জন্য যারা ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজেদের বদলে ফেলতে প্রস্তুত সেইসব মানুষদের প্রতি শুধুমাত্র শিক্ষক দিবসে নয় প্রত্যেকটি দিন আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।আজ শিক্ষকরা সমাজে না থাকলে এই সাংঘাতিক অতীমারীর যারা প্রথম সারির যোদ্ধা তাদেরও হয়তো সমাজ পেত না।আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে আমাদের মধ্যে বিনয়, মূল্যবোধ, সম্মানবোধ যেই মানুষগুলো জাগিয়ে তুলেছেন তাদের অসম্মানে কোনোদিন সমাজের উন্নতির সম্ভব নয়।

শিক্ষকরা বহু যুগ ধরে বহু ভাবে তাদের মানবজাতির উন্নতিকল্পে নিজেদের নিযুক্ত করছেন।আজও তার অন্যথা হয় নি।তাই তাদের এই প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে আমাদেরও উচিত তাদের এই কাজে সাধ্যমতো সাহায্য করা।তাদের টেকনোলজিক্যাল খামতিকে উপহাস না করে তাদের এই অনলাইন ব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ানো।সবসময় মনে রাখতে হবে এই মানুষ গড়ার কারীগড়দের যথাযোগ্য সম্মান দিলেই হবে মানবজাতির উন্নতি, হবে দেশের উন্নতি।

Leave a Reply