এই ৮টি উপায়ে এখন বাড়িতে বসেই শুরু করুন ব্যবসা!

0
412

ব্যবসা শুরুর কথা ভাবলেই অনেকের মাথায় বাজ পড়ে। ব্যবসার জন্য কমার্শিয়াল জায়গা ভাড়া নেওয়া , নিজের অফিস তৈরী করা, কর্মী নিযুক্ত করা এছাড়াও হাজার সমস্যার কথা ভেবে বেশীরভাগ লোকই পিছিয়ে আসেন ব্যবসা শুরু করার চিন্তা ভাবনা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে, টেকনোলজি হয়েছে উন্নত। সেই উন্নত টেকনোলজির সহায়তায় এখন ব্যবসা সহজেই বাড়িতে বসেই শুরু করা যায়।

বর্তমানে টেকনোলজির কল্যানে সারা বিশ্বের সাথে ঘরে বসে যোগাযোগ স্থাপন এখন ভীষন সহজ। একটি ব্যবসাকে স্থাপিত করার জন্য এই যোগাযোগ-এর সুবিধা থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ ব্যবস্থার পূর্ণ সুবিধা থাকলে ঘরে বসে ব্যবসা শুরু করা কোনো ব্যাপারই না।এমনকি বাড়ি থেকে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিকল্প আছে বিস্তর।

বাড়ি থেকে ব্যবসা করার সুবিধা এবং অসুবিধা

বাড়ি থেকে ব্যবসার অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে আমাদের জীবনের ওপর।ব্যবসা শুরু করার আগে সেই সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া ভীষন ভাবে প্রয়োজনীয়।এখন দেখে নেওয়া যাক বাড়িতে বসে ব্যবসা শুরু করার সুবিধা এবং অসুবিধা কি থাকতে পারে।

সুবিধা

  • বাড়িতে বসে ব্যবসা শুরু করলে প্রচুর অর্থ বেঁচে যাবে।
  • নিজের প্রোডাক্ট শুধু মাত্র নিজের এলাকায় কিংবা নিজের দেশে না, সারা বিশ্বে বিক্রি করার সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • কাজের কোনো বাধা ধরা সময় থাকবে না, নিজের সমস্ত ব্যক্তিগত কাজ সামলে নিজের সুবিধা মতো করা যাবে ব্যবসা।
  • নিজের পরিবারের সাথে এই ব্যবসা চালু করতে পারেন, যেখানে আপনার সাথে আপনার পরিবারের লোকও অর্থ বিনিয়োগ করবেন।

অসুবিধা

  • নিজের বাড়ির কোনো অংশকে ব্যবসার জায়গা হিসেবে পরিবর্তিত করে দিতে হতে পারে।এছাড়াও যেহেতু ব্যবসা বাড়ি থেকে হচ্ছে তার জন্য কাজের জীবনের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের দ্বন্দ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • ব্যবসার আইনত নিয়মের সাথে চলতে গিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ভবিষ্যতে ব্যবসা বড়ো হয়ে গেলে বাড়িতে জায়গায় নাও কুলাতে পারে। তখন হয়তো কমার্শিয়াল জায়গা ভাড়া নিতে হতে পারে ব্যবসার খাতিরে।
  • বাড়িতে বসে কাজ  একজন মানুষকে অনেক স্বাধীনতা দিলেও, একা একা কাজ করার সময়ে একাকিত্ব অনুভব হতে পারে।লোকজনের মাঝে থাকতে ভালোবাসে এমন মানুষদের জন্য বাড়িতে বসে কাজ ভীষন কঠিন।

বাড়িতে বসে আটটি ব্যবসা করার ধারণা

এবার আলোচনা করা যাক আসল বিষয় নিয়ে। সমস্ত সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে যদি বাড়ি থেকে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে এখন আসা যাক বাড়ি থেকে কোন কোন ব্যবসা করা যাবে সেই বিষয়ে।

আগেই বলা হয়েছে, বাড়ি থেকে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিকল্প মিলবে প্রচুর। তার মধ্যে থেকে আটটি সহজ ঝঞ্ঝাটমুক্ত উপায় নিয়ে আজ আলোচনা করা হলো।

১। একসাথে অনেক প্রোডাক্ট কিনে অনলাইনে বিক্রি করা

বাড়িতে বসে নিজের ব্যবসা শুরু করার সহজ পদ্ধতি হলো, একসাথে অনেক প্রোডাক্ট কমদামে কিনে অনলাইনে লাভ রেখে বিক্রি করা। যদি আপনার বাড়িতে প্রোডাক্ট কিনে জমিয়ে রাখার জায়গা থাকে তাহলে এই ব্যবসা আপনার জন্য একদম উপযুক্ত।

এরপরে ব্যবসা বৃদ্ধি পেলে তখন অবশ্য প্রোডাক্ট জমিয়ে রাখার জন্য অতিরিক্ত কমার্শিয়াল জায়গার দরকার পড়তে পারে।

২। বাড়িতে নিজের বানানো প্রোডাক্ট বিক্রি করা

আপনি যদি বাড়িতে কোনো জিনিস বানাতে পারেন, তাহলে আর বাইরে থেকে প্রোডাক্ট না কিনে বাড়িতেই নিজস্ব প্রোডাক্ট বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। শুধু অনলাইনেই নয় এলাকার বিভিন্ন দোকানেও আপনার নিজস্ব প্রোডাক্ট-এর সাপ্লাই দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।বাড়িতে থেকে আপনি বিভিন্ন প্রোডাক্ট বানাতে পারেন, উদাহরণ স্বরূপ-

  • ঘরে বানানো মোমবাতি
  • ঘরে বানানো গয়না
  • ঘরে বানানো সাজার জিনিস
  • নিজের তৈরী করা শিল্প
  • নিজের বানানো খাদ্য দ্রব্য
  • নিজের ডিজাইনের কাপড়-জামা

ভবিষতে ব্যবসার হার বৃদ্ধি পেলে তখন সাহায্যের জন্য কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন পড়তে পারে।

৩। নিজের ডোর-শিপিং স্টোর চালু করুন

মানুষ এখন ভীষনভাবে অনলাইন শপিং-এর দিকে ঝুঁকছে। তার ফলে ডোর-শিপিং -এর ব্যবসার চাহিদা এখন বিশেষ বৃদ্ধি পেয়েছে।তবে এই জন্য একটি স্থায়ী প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ের প্রয়োজন।

৪। প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড স্টোর চালু করুন

প্রিন্ত-অন ডিমান্ড ব্যবসা হলো ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে কফি কাপ, টি-শার্ট, ফোন কভার ইত্যাদিতে ক্রেতাদের মন মতো ছবি বা লেখা প্রিন্ট করে দেওয়ার ব্যবসা। বর্তমানে প্রিয়জনদের উপহার দেওয়ার জন্য অনেকেই এই পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।সুতরাং নিঃসন্দেহে এই বাড়িতে বসে শুরু করার জন্য এই ব্যবসা সুযোগ্য।

৫। নিজের প্রতিভা অথবা দক্ষতা বিক্রি করুন

কোনো প্রোডাক্টের থেকে নিজের প্রতিভা বা দক্ষতার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করা বেশী সহজ। কথাতেই আছে ‘সময়ই অর্থের অনুরূপ’ । এই কথা অনুযায়ী নিজের দক্ষতা সময়ের ভিত্তিতে বিক্রি করে শুরু করাই যায় নিজস্ব ব্যবসা।

এই কাজে একসাথে একাধিক কোম্পানির সাথে অনায়াসে কাজ করে যথেষ্ট পরিমানে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।

নিজের প্রতিভা কিংবা দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে করার মতো কয়েকটি ব্যবসা হলো-

  • গৃহশিক্ষকতা
  • ফ্রিল্যান্স রাইটিং
  • পার্সোনাল ট্রেনিং
  • ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
  • মার্কেটিং
  • ডিজাইনিং

৬। নিজের দক্ষতাকে প্রোডাক্টে রূপান্তর করে  বিক্রি করুন

আপনার যদি নিজস্ব কোনো গুন থাকে কিংবা কোনো বিষয়ে যদি আপনার অপরিমিত জ্ঞান থাকে তাহলে সেই দক্ষতাকেই আপনি অনায়াসেই প্রোডাক্ট হিসেবে বিক্রি করতে পারবেন। যেমন, আপনার যদি কোনো বিষয়ে জ্ঞান থাকে তাহলে সেটির ওপর একটি কোর্স করাতে পারেন।

৭। নিজের অডিয়েন্স বাড়িয়ে তুলে নিজের অনলাইন সাইটকে মানিটাইজ করুন

আপনি যদি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন এবং আপনার নিজস্ব ফলোয়ারের সংখ্যা যদি অনেক হয়ে থাকে, তবে আপনি নিজস্ব ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব-এ চ্যানেল খুলে সেই অডিয়েন্সকে কাজে লাগিয়ে অনায়াসেই নিজের সাইটকে মানিটাইজ করে অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।

৮। একটি চালু ই-কমার্স ব্যবসা কিনে ফেলুন

সবশেষের ঝঞ্ঝাটমুক্ত উপায়ে বাড়িতে বসে করার মতো ব্যবসার উপায় হলো একটি সুস্থাপিত এবং চালু ই-কমার্স ব্যবসাকে কিনে ফেলা। এই ব্যবসার ক্ষেত্রে যদিও বিনিয়োগের দরকার পড়ে। তবে অবশ্যই একটি ই-কমার্স সাইট কেনার আগে সেই সাইটের সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখার প্রয়োজন।এছাড়াও সেই ই-কমার্স সাইটের অতীতের সমস্ত কার্যক্রমও বিশেষভাবে যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।

বর্তমানে যখন টেকনোলজির কল্যানে মানুষের মধ্যে সমস্ত দূরত্ব কমে এসেছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাড়িতে থেকে ব্যবসা শুরু করা ভীষনভাবে লাভদায়ক। যদি ব্যবসার সমস্ত প্রক্রিয়া এবং কাজকর্ম অবগত থাকে তবে এই যুগে তাকে সুস্থাপিত করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তবে ব্যবসা শুরু করার আগে একটি লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া জরুরি। লক্ষ্যে স্থির থাকলে এবং ব্যবসার সমস্ত বিষয় জানা থাকলে সহজেই বাড়ি বসে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।

আপনার কি মনে হয় এই বিষয়ে?আপনার মতামত অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনের মাধ্যমে এবং লাইক ও শেয়ার করে পোস্টটিকে ছড়িয়ে দিন সকলের মাঝে।টেকনোলজি সম্বন্ধিত আরও খবর জানতে চোখ রাখুন টুকিটেকের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।

Leave a Reply